টিপু নেতাকে বললো ভাই আমাকে একটা পদ দিবেন, পদ। আপনি যা এতোদিন বলেছেন শুনেছি,ভবিষ্যতেও শুনবো।
প্লিজ ভাই।
নেতা বললেন যা বলবো তাই শুনবি তো?
জি ভাই, তাই শুনবো | কমিটি ঘোষণা করতে আর মাত্র ৪০ দিন বাকী।
তাহলে কাল থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টায় আমাকে ৪০ দিনই ফোন দিবি
কী পারবি?
হ্যাঁ ভাই,পারবো।
বাসায় এসে রাজপথের লড়াকু টিপু চিন্তায় পড়ে গেলো। সারা জীবনের তার একটাই ব্যর্থতা তা-হলো খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা।
সেই কঠোর শর্তেই আজ পড়ে গেলা টিপু।
মা-বাবা কতো কথাই না সকালে উঠার জন্য বলেছে তাও শুনেনি অথচ আজ কোন গ্যাঁড়াকলে পড়লো?
ঘুমানোর আগে পানি খেলে যে খুব সকালে প্রস্রাবের বেগ আসে, সে কথা টিপু জানতো।
তাই টিপু গভীর রাতে প্রচুর পানি খেয়ে ঘুমাতে গেল, ঠিকই ৬ টার আগে প্রস্রাবের বেগ আসলে ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং লিডারকে ভয়ে ভয়ে ফোন দিলো কিন্তু রিসিভ হলো না।
শত বার দিয়েও কাজ হলো না।
পরদিন লিডার টিপুকে ডাকলেন।
এবং বললেন ফোন একবারের বেশি দেওয়া যাবে না। টিপু বললো ওকে লিডার।
-জি লিডার আর এমন হবে না।
টিপু ঠিকই ৩৯দিন ধরে ঠিক ৬ টায় ঠিক মতোই ফোন করে গেলো।
এই ৩৯দিনে সে একবারও লিডার কে ফোন রিসিভ করাতে পারেনি |
৪০তম দিনে লিডারের ফোনে টিপু ফোন আর আসে নাই
৪১তম দিনেও আসলো না,
৪২তম দিনেও আসলো না।
এদিকে কমিটি ঘোষিত হয়ে গেলো –
কিন্তু, টিপুর নাম আসেনি।
চারিদিকে ফুল মিস্টি আনন্দ কতো রকমের মজা মাস্তি তার ইয়ত্তা নাই।
১৫ দিন পরে টিপু উষ্কখুষ্ক চুল,বিবর্ণ চেহারা নিয়ে লিডারের সামনে আসলো। সালাম দিলো।
লিডার বললেন-
কি রে টিপু তুই তো ফেল করেছিস,
একদিনের জন্য মিস করলি, কেন রে টিপু?
টিপু আমি দুঃখিত তোকে একটা পদ দিতে পারলাম না – কারণ তুই শর্ত ভঙ্গ করেছিস অথচ নেতা টিপুর বিগত কয়েক বছরের ত্যাগের কোনো মূল্যায়নই করলেন না।
টিপুর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। এতোদিন যারা দলের বিরোধীতা করছে তারাও পদ পেয়েছে।
উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ টিপুকে দেখছে।
নেতা বললেন কি রে টিপু কী হইছে তোর?
টিপু অশ্রুসজল চোখে বললো ভাই আমার “মা” সেই ৪০তম দিনে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।
এই সংবাদটা আমি ঠিক ৬ টার সময়-ই পাই।
এজন্য আমি ফোন করতে পারিনি ঐ দিন।
আমি পদ চাইতে আসিনি ভাই।
আমার একটা কষ্ট শেয়ার করতে এসেছি।
এই যে আমি একজন কর্মী, আমি এক নাগাড়ে ৩৯দিন একই সময় আপনাকে ফোন দিলাম, কই আপনি তো আমার অনুপস্থিতিতে একবারও ফোন দিলেন না ভাই?
একটা খবরও নিলেন না !
ভাই আমি পদ নিবো না।
আমি শিক্ষা পেয়েছি- যে নেতা তার কর্মীদের ভালো মন্দের খবর নেয় না, কল ও রিসিভ করার সময় পায় না তার সাথে রাজনীতি তো দূরের কথা, তার আশে- পাশেও যাওয়া ঠিক না ।
টিপু বের হয়ে গেলো ঠিকই, কিন্তু- নেতার পাষাণ হৃদয় কে নাড়িয়ে গেলো কিছুটা !
“শেষ ভালো যার সব ভালো তার” তাই তৃণমূলের ত্যাগী কর্মীরা শেষমুহুর্ত পর্যন্ত সজাগ থাকুন, যোগাযোগ রাখুন যাতে টিপুর মতো নেতৃত্ব থেকে ছিটকে না পড়েন?